organic2022.com
https://www.organic2022.com/2022/07/blog-post_41.html
শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আপনি কি জানেন শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার কি? থ্যালাসেমিয়া একটি মারাত্মক ব্যাধি। এই রোগ বংশানুক্রমে স্থানান্তরিত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় লক্ষ লক্ষ শিশু মারা যায়। এছাড়াও এই রোগের ব্যয় বহন করা অনেক কষ্টসাধ্য। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর সঠিক যত্ন নিলে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব। তাই আমাদের সকলের উচিত শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো সম্পর্কে জানা। যদি আমরা তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করতে পারি তাহলে বেঁচে যাওয়া সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
তাই আপনাদের সুবিধার্থে, আজকে আমরা আলোচনা করব শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে। থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিকার গুলো জানলে শিশুকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তাহলে যখন দেখে নাই শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।
পোস্ট সূচিপত্র: শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
থ্যালাসেমিয়া কি? শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বংশানুক্রমিক রক্তের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের অক্সিজেন পরিবাহী হিমোগ্লোবিন কনার উৎপাদনে ত্রুটি দেখা দেয়। যার ফলে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভোগেন। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির অবসাদগ্রস্ততা থেকে অঙ্গহানি পর্যন্ত ঘটে থাকে।
আবার থ্যালাসেমিয়া দুই ধরনের। যথা: 1. আলফা থ্যালাসেমিয়া ও 2. বিটা থ্যালাসেমিয়া। তবে আলফা থ্যালাসেমিয়া বিটা থ্যালাসেমিয়া থেকে তুলনামূলক কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি ধরনের হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে বিটা থ্যালাসেমিয়া উপসর্গ অনেক তীব্র। যদি এক থেকে দুই বছরের শিশুর রোগটি তাৎক্ষণিক ধরা না পড়ে তাহলে শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। তবে আলফা থ্যালাসেমিয়া বিটা থ্যালাসেমিয়া থেকে প্রাদুর ভাব বেশি।
শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
শিশুর ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া জন্মগতভাবেই হয়ে থাকে। যা তার মা - বাবা থেকে স্থানান্তরিত হয় জিনগত বা জেন্যাটিকেল ত্রুটির কারণে। শিশুর বয়স যখন দুই বছর তখন থেকেই এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। তারপর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ সনাক্ত করা হয়। থ্যালাসেমিয়া মেজর এ আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
একটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে যে সমস্যাটা দেখা যায় সেটি হল বয়সের সাথে সাথে বৃদ্ধি না পাওয়া। আরো নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমন: অরুচি, রক্তস্বল্পতা, খাদ্যে অনীহা, দুর্বলতা এবং একাকিত্ব। তবে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন এবং সঠিক পরিচয় যার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুটিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তাই আমরা আজকে আলোচনা করব শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।
শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ: শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:
- ত্বক ফ্যাকাসে ও জন্ডিস হওয়া: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এবং শিশুটি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়।
- তন্দ্রা ও ক্লান্তি: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হলে শিশুর অনেক বেশি তন্দ্রা এবং ক্লান্তি দেখা দেয়।
- বুক ব্যাথা: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর বুকে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে।
- হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া: এই রোগে আক্রান্ত শিশুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
- শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা: এই রোগে আক্রান্ত শিশুর শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
- ক্রাম্প হওয়া: এই রোগে আক্রান্ত শিশুর পায়ে ক্রাম্প হতে পারে।
- হৃদস্পন্দন: এই রোগে শিশুর হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে।
- খাদ্যে অনীহা: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু একদম খেতে চায় না বা খাদ্যে প্রচন্ড অনিহা দেখা দেয়।
- পর্যাপ্ত বৃদ্ধি না হওয়া: এই রোগের কারণে শিশুটির বয়সের সাথে সাথে পর্যাপ্ত বৃদ্ধি হয় না।
- মাথা ব্যাথা: কখনো কখনো শিশুর মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
- মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হওয়া: এ রোগের কারণে শিশুর মাথা ঘুরতে পারে ও মাঝেমধ্যে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: এ রোগে আক্রান্ত শিশুর সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
আরো দেখুন: ৭ দিনে পাতলা চুল ঘন করার ঘরোয়া উপায়।
শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিকার: শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
এখন জানবো শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিকার।
থ্যালাসেমিয়া মাইনরে আক্রান্ত শিশুর সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত শিশুর রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দিলে রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। এভাবে বার বার রক্ত সঞ্চালনের ফলে একটি মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তা হল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন জমাট বাঁধা। যার ফলে রোগীর যকৃত বিকল হয় মারা যেতে পারে। এজন্য রোগীকে আয়রন চিলেটিং এজেন্ট দেওয়া হয়। ফলে রোগীর দেহের অতিরিক্ত আয়রন বের হয়ে যায়।
এজন্য থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার ও ঔষধ গ্রহণ করা পরিহার করতে হবে। রোগীর দেহে রক্ত সঞ্চালনের পাশাপাশি ফলিক এসিড দেওয়া হয় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে। কয়েকবার রক্ত সঞ্চালনের ফলে রোগের প্লীহা বড় হয়ে যায়। যার ফলে প্লীহা কেটে ফেলতে হয়। থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে অস্থিমজা প্রতিস্থাপন। কিন্তু এই চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল।
রোগীর থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় রোগ নির্ণয় করা এবং চিকিৎসা নেওয়া উচিত। এভাবে আস্তে আস্তে শিশুকে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত করা যেতে পারে। প্রতিবছর প্রায় এক লক্ষের ও বেশি শিশু জন্মগতভাবে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
এছাড়াও ঘরোয়াভাবে কিছু যত্নের মাধ্যমে রোগীর অবস্থার আরো উন্নতি করা সম্ভব। যেমন: সুস্বাস্থ্যকর খাবার, আয়রন যুক্ত খাবার পরিহার করা, নিয়মিত ঘুম, ইনফেকশন পরিহার করা, বিয়ে এবং গর্ভধারণের পূর্বে ব্লাড টেস্ট করা ইত্যাদি।
শেষ কথা: শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আমাদের আজকের পোস্ট শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার পড়ে নিশ্চয়ই আপনি উপকৃত হয়েছেন। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর সঠিক যত্নের মাধ্যমে শিশুকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। শিশুর থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শ মত এবং ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চললে আশা করা যায় সহজে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে। আপনার পরিপাশের সবাইকে থ্যালাসেমিয়া থেকে সচেতন করতে আজকের পোস্টটি অবশ্যই শেয়ার করবেন।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন